রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১১

টার্মিনালঃ কী, কেন ও কিভাবে-১ম পর্ব-টার্মিনালের সাথে পরিচয়

বাংলাদেশে নতুন-পুরাতন যত কম্পিউটার ব্যবহারকারী আছেন তাদের মধ্যে মনে হয় প্রায় শতকরা ১০০ ভাগই কম্পিউটার ব্যবহার শুরু করেছেন উইন্ডোজের কোনো না কোনো ভার্সন দিয়ে। অনেকে জানেনই না যে, উইন্ডোজ ছাড়া আর কোন অপারেটিং সিস্টেম পৃথিবীতে আছে। উইন্ডোজ থেকে লিনাক্সে আসার পেছনে সবচেয়ে বড় যে ভয় মানুষের মাঝে কাজ করে তা হল "লিনাক্সে কোড লিখে লিখে কাজ করতে হয়"! অনেকে আবার মাউস ছাড়া এই কোড লেখাকে অত্যন্ত ঝামেলা ও বিরক্তিকর মনে করেন। কিন্তু সেই যুগ পাল্টে গেছে। বিজ্ঞাপনের ভাষায় বলতে হয়, "হেই দিন কি আর আছে, দিন বদলাইছে না"? এখনকার দিনে উবুন্টুর মত শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আপনি এক লাইন কোড না লিখেও আপনার যাবতীয় কাজ মাউস দিয়েই উবুন্টুতে করতে পারেন।
তাহলে কেন আর অহেতুক এই পোস্টের অবতারণা? কেন টার্মিনাল নিয়ে লেখা? কারণ, খুবই সাধারণ। লিনাক্সে অভ্যস্ত কোন ব্যবহারকারীকে যদি জিজ্ঞেস করেন, "লিনাক্সের কোন সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যাপ্লিকেশন কোনটি"? সবাই একবাক্যে জবাব দেবে "টার্মিনাল"। লিনাক্সে প্রায় সকল কাজ আপনি এই টার্মিনালে কোড লিখে সম্পন্ন করতে পারবেন। এর ব্যবহারের জন্য আহামরি এমন কোন কঠিন কোন জানার কোন প্রয়োজন নেই। একজন সাধারণ ব্যবহারকারী হিসেবে অল্প কিছু কমান্ড দিয়েই আপনি টার্মিনালে অনেক কাজ সহজে ও দ্রুত করতে পারবেন।

কী এই টার্মিনাল
লিনাক্সে মাউস ব্যবহার না করে সিস্টেম অপারেট করার জন্য কমান্ড লেখা ও প্রয়োগ করা হয় যে অ্যাপ্লিকেশনে, সেটাই হচ্ছে টার্মিনাল। উবুন্টুতে ডিফল্ট ভাবে যে টার্মিনাল দেয়া থাকে সেটা হচ্ছে GNOME Terminal। আরো বিভিন্ন রকমের টার্মিনাল অ্যাপ্লিকেশন আছে। যেমন, Konsole, Terminator, Guake, Tilda, Yakuake ইত্যাদি। নামে ও চেহারা ভিন্ন হলেও এদের কাজ একই রকম। এখানে আমি শুধু উবুন্টুর ডিফল্ট টার্মিনাল অ্যাপ্লিকেশন গ্নোম টার্মিনাল ও উবুন্টুতে এর ব্যবহার নিয়ে কথা বলব।

কেন এই টার্মিনাল
আগেই বলেছি টার্মিনাল দিয়ে আপনি সহজে ও দ্রুত অনেক কাজ করতে পারবেন। একটা উদাহরণ দেই। ধরুন উবুন্টু ইন্সটলের পরে আপনি নিচের প্রোগ্রামগুলো ডাউনলোড ও ইন্সটল করবেনঃ
  • Audacious-গান শোনার সফটওয়্যার
  • VLC-মুভি দেখার সফটওয়্যার
  • Ubuntu Restricted Extras-বিভিন্ন ধরণের অডিও/ভিডিও কোডেক
  • Pidgin-অনলাইন চ্যাটিং সফটওয়্যার
  • Deluge-বিট টরেন্ট ক্লায়েন্ট
  • Chromium Browser-ওয়েব ব্রাউজার
  • Gimp-ছবি সম্পাদনা ও বিভিন্ন আঁকাআঁকির জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার
এই সফটগুলো ইন্সটলের জন্য আপনি দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। এক সফটওয়্যার সেন্টার ও অন্যটি সিন্যাপ্টিক প্যাকেজ ম্যানেজার। সিন্যাপ্টিকে সবগুলো প্যাকেজ একটা একটা করে সিলেক্ট করে ইন্সটল করতে পারবেন আর সফটওয়্যার সেন্টারে একটা একটা করে প্যাকেজ খুঁজে বের করে একটা একটা করে ইন্সটল করতে হবে। কিন্তু টার্মিনালে? যদি বলি এই সবগুলো কাজ টার্মিনালে মাত্র একটি কমান্ড দিয়েই ইন্সটল করতে পারবেন, তাহলে? অবাক হচ্ছেন? দেখুন, নিচের একটি কমান্ডের মাধ্যমে কিভাবে সবগুলো প্যাকেজ ইন্সটল করা যায়ঃ
sudo apt-get install audacious vlc ubuntu-restricted-extras pidgin deluge chromium-browser gimp
কি, খুব সহজ আর দ্রুত কাজ করল কিনা বলুন? এতো গেল মাত্র ৭টি প্যাকেজ ইন্সটলের কথা। আপনি ৭টি কেন ৭০টি প্যাকেজ ইন্সটল একেবারে করতে চাইলে এই এক কমান্ডের মাধ্যমেই করতে পারবেন। শুধু প্রতিটা প্যাকেজের মধ্যে একটি করে স্পেস রাখতে হবে।
এতো গেল সফটওয়্যার ইন্সটলের কথা। এখন বলি এরর রিপোর্ট নিয়ে। টার্মিনালের একটি অন্যতম ফাংশন হচ্ছে এরর রিপোর্ট। ধরুন, আপনি যদি কোন সফটওয়্যার ওপেন করতে গিয়ে দেখেন সেটি ওপেন হচ্ছে না, তখন বুঝতেই পারছেন কোথাও না কোথাও সমস্যার কারণে এরকম হচ্ছে। কিন্তু কি কারণে হচ্ছে আপনি সেটা বুঝবেন কিভাবে? আপনি যদি ঐ সফটওয়্যারটি টার্মিনালের মাধ্যমে ওপেন করতে যান তখন টার্মিনাল আপনাকে বলে দিবে কি কি কারণের এমন হচ্ছে। বিভিন্ন ব্লগ বা ফোরামে আপনি যদি আপনার সমস্যা নিয়ে পোস্ট করেন, তখন দেখবেন অনেক সময়ই আপনাকে বলা হয়ে টার্মিনাল দিয়ে অমুক সফটওয়্যারটি ওপেন করলে টার্মিনালে কি এরর দেয় সেটি পোস্ট করার জন্য।

কোথায় থাকে টার্মিনাল
উবুন্টুতে টার্মিনাল খুলতে মেনু থেকে Application>Accessories>Terminal-এ ক্লিক করুন অথবা Ctrl+Alt+T চাপুন। টার্মিনাল ওপেন হলে নিচের উইন্ডোর মত একটি উইন্ডো দেখতে পাবেনঃ
টার্মিনাল খুললেই এতে ইমেইল অ্যাড্রেসের মত একটি লাইন দেখতে পাবেন,
username@hostname:~$
এখানে @ এর আগে আপনার ইউজার নেম থাকবে এবং পরে হোস্ট নেম বা আপনার পিসির নাম থাকবে। যেমন উপরের ছবিতে আমার টার্মিনালে দেখতে পাচ্ছেন,
icche_ghuri@mavrick:~$
এখানে আমার ইউজার নেম icche_ghuri এবং আমার পিসির নাম mavrick। এই লাইনের $ চিহ্নের পর আপনার কমান্ড লেখা শুরু করতে হবে।

আশা করছি এতোক্ষণে টার্মিনাল সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। পরের পর্বগুলোতে আমরা দেখব টার্মিনালের কিছু বেসিক অপারেশন যার মাধ্যমে আপনি সহজে টার্মিনালে কমান্ড লেখা ও প্রয়োগ করতে পারবেন। এবং তারও পরে টার্মিনালের কিছু কমান্ডের ব্যবহার। তারপর হয়ত আপনিও মুচকি হেসে বলবেন, "টার্মিনাল...ঐটা আসলেই একটা জিনিস"!


লেখাটি অভ্রনীল ভাইয়ের টার্মিনাল নিয়ে টানাটানি অবলম্বনে লিখিত

পরের পর্বঃ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | coupon codes